মানসিক চাপ শারীরিক ও মানসিক নানান পরিবর্তন সাধন করে। অতিরিক্ত চাপের কারণে উদ্বেগ, অনিদ্রা, হজমে সমস্যা, হতাশা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও, মানসিক চাপ আরও কিছু অজানা প্রভাব ফেলে বলে জানা যায়।
ব্যথার অনুভূতিতে পরিবর্তন
মানসিক চাপ ব্যথার অনুভূতির ওপর প্রভাব রাখে।
টেক্সাসের নিবন্ধিত ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট জোসেফ রেইনার ‘ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “মানসিক চাপ কীভাবে আঘাতের ঝুঁকি ও ব্যথার অনুভূতি বাড়ায় সে বিষয়ে ধারণা পেয়েছি আমার রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা মনে করি কেবল শারীরিক আঘাত বা ক্ষতিই হচ্ছে ব্যথা। বাস্তবে মস্তিষ্কে স্নায়ু যেভাবে সংকেত প্রদান করে তার ওপর নির্ধারণ করে ব্যথার মাত্রা।”
ব্যথার ওপরে মানসিক চাপের প্রভাব বোঝাটা বেশ জটিল। পরিস্থিতি ও চাপের মাত্রার ওপর ব্যথার মাত্রা নির্ভর করে। ফলে একই ক্ষেত্রে কারও ব্যথার অনুভূতি কম বা বেশি হতে পারে।
সাধারণত, দীর্ঘস্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী চাপের কারণে ব্যথার অনুভূতি তীব্র হয় বলে জানা গেছে নানান পরীক্ষা থেকে।
বৈজ্ঞানিকভাবে বলা যায়, মানসিক চাপ অনুভব করলে আজে বাজে খাবার থেকে দূরে থাকা উপকারী।
নিয়ন্ত্রণযোগ্য মানসিক চাপ মস্তিষ্কের তীক্ষ্ণতা বাড়ায়
অবিশ্বাস্য হলেও, সম্প্রতি ‘পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি (পিএসইউ)’য়ের গবেষণা থেকে দেখা গেছে জীবনের প্রতিকূলতা ও মানসিক চাপ মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ও চিন্তাশীলতা তীক্ষ্ণ করে।
গবেষণায় একদল স্বেচ্ছা সেবকের ওপর পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, যাদের দৈনিক মানসিক চাপ শূন্য তাদের জ্ঞানীয় দক্ষতা মানসিক চাপে থাকে এমন লোকদের চেয়ে কম।
‘ইমোশন’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার সহকারী লেখক ‘পিএসইউ’য়ের অধ্যাপক ডেভিড এম অ্যালমেডিয়া বলেন, “চাপ সাময়িক খারাপ অনুভূতি বাড়ায় ঠিকই কিন্তু তা সমস্যা সমাধানের জন্য মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও দক্ষতা বাড়ায় যা সাধারণত বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায়।”
চাপবিহীন জীবন শুনতে আরামদায়ক লাগলেও তা আসলে বিরক্তিকর। তবে অতিরিক্ত চাপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মাঝে মধ্যে মানসিকচাপ জীবনের একঘেয়েমিতা ও নিস্তেজভাব কমাতে সহায়তা করে।
মানসিক চাপের কারণে সারা রাত মুখ নড়ে
সারাদিনের মানসিক চাপ রাতে ঘুমে ব্যঘাত ঘটায়। এর ফলে নাক ডাকা, দাঁত কিড়মিড় শব্দ করা, মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া ইত্যাদির সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে ঘুমের ঘোরে কথাও বলেন মানসিক চাপের ফলে।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাককেঞ্জি হাইড, একজন প্রত্যয়িত ঘুম বিজ্ঞান-কোচ বলেন, “মানসিক চাপের কারণে ঘুমের গুনগত মান নষ্ট হয়। ফলে সারা রাত চোয়ালের পেশী অনিচ্ছাকৃতভাবে টানটান হয়ে থাকে। যা আপাতদৃষ্টিতে সমস্যা মনে না হলেও দাঁতের ক্ষতি সাধন করে।”
কাজে কালক্ষেপণ
মানসিক চাপ অনেক মানুষকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ পালন থেকে বিরত রাখে। এতে করে ব্যক্তির উদ্বেগ ও মানসিকচাপ আরও বৃদ্ধি পায় ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
মানসিক চাপ কমাতে শরীরে দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হল উন্নত ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। পুষ্টিকর খাবার জৈবিক ঘাটতি পূরণ করে মানসিক চাপ সামলাতে সহায়তা করে।
অন্যদিকে মানসিক চাপ প্রেরণাও যোগায়
একেক মানুষের ওপর চাপ একেক প্রভাব ফেলে। কেউবা নিজেকে গুটিয়ে ফেলে চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে, কেউবা আবার চাপ সামলাতে পূর্ণদমে জীবনকে উপভোগ করা শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের টাকোমা শহরের মনোবিজ্ঞানী ড. আলেকজান্দ্রা এমেরি বলেন, “চাপ সুখের কোনো মাধ্যম হলে তা মানুষের লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করে, অন্যদিকে এটা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে।”
হাড়ের ক্ষতি করতে পারে মানসিক চাপ
দীর্ঘমেয়াদী চাপ হাড়ের ঘনত্বের ওপরে প্রভাব রেখে ‘অস্টিওপোরোসিস’ বা হাড়ক্ষয় রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
চাপে থাকলে দেহের ‘স্ট্রেস হরমোন’ কর্টিসোল নিঃসরণ হয়। ফলে ক্যালসিয়ামের শোষণ বেশ জটিল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন এমনটা চলতে থাকলে হাড়ের ঘনত্ব ও স্থায়িত্ব দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাছাড়া, ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন এন্ডোক্রিনোলজি’তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি হাড়ের নতুন কোষ তৈরিতে বাধা দেয়।
সূত্র, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম